কোয়ারেন্টাইন

                                

                                                            

বর্তমান সময়-ধবধবে সাদা কাপড়ে ঢাকা বিছানার মাঝে রাখা ফোনটা অনেকক্ষণ ধরেই বেজে চলেছে। তবু সেটাকে রিসিভ করার মতো মনের অবস্থা বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই সৌমেনের। আজ তিনদিন হয়ে গেছে। অনর্গল ফোন আসছে। মেসেজ, ভিডিয়ো কলের কথা তো ছেড়েই দিলাম। বাইরে আকাশটা আজ মেঘলা করে এসেছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের রেখা কেউ এঁকে দিচ্ছে কালো মেঘের মাঝখান দিয়ে। হোটেলের রুম থেকে এক পা বেরোনোর অনুমতি নেই তার। রুমের এসিটা কমিয়ে দিল। কেনো জানিনা খুব ঠান্ডা লাগছে। পা টা অবশ হয়ে আসছে। আবার মোবাইলটা নড়ে উঠল। কালো স্ক্রিনের ওপর রঙিণ আলোটা আবার খেলে গেল। ফোন টাকে কি বন্ধ করে দেবে? না থাক। যদি মা ফোন করে। পরক্ষনেই মায়ের ফোন এলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করতেই, ওপার থেকে ভেসে এলো মা এর গলা,

-      হ্যাঁ বাবু, খেয়েছিস।

গলাটা শুনে চোখ দিয়ে জল গাল বরাবর নেমে এল ঝরনার মতো। গলাটা শুকিয়ে গেছে। বোতলটা হাতের সামনে খুঁজে পেলোনা। অনেক কষ্টে বলল,

-      হ্যাঁ মা।                                                                                                     

-      তোর কিছু হয়েছে বাবু? গলাটা এরম শোনাচ্ছে কেন?

-      কিছুনা মা। কালকে এসি টা বন্ধ করতে ভুলে গেছিলাম। তাই একটু গলাটা ধরেছে।

-      তোকে কতবার বারন করেছি, অতো জোরে এসি চালিয়ে ঘুমোবিনা। কে শোনে কার কথা।

-      ...

বেশ কিছুক্ষন কথা চলল। আর চলল নিজের বর্তমান পরিস্থিতিটাকে লুকানোর এক অহেতুক লড়াই। সৌমেন জানেনা কতদিন তাকে এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। হতেই পারে এটাই তার জীবনের শেষ যুদ্ধ। যদি হেরে যায়, তবে কোনোদিন আর মায়ের হাতের আদর খাওয়া হবেনা। বাবার সাথে বসে আর ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের খেলা দেখাই হবেনা। আর ঐস্মি? ঐ হাতের সেই নরম স্পর্শ বসবেনা তার গালে। আরে সেসব তো ছাড়ো। শেষবারের মতো মা তার ছেলের বুকে মাথা গুঁজে কাদতেও পারবেনা। আবার একটা ভিডিয়ো কল আসছে। কী করবে সে? জানালা দিয়ে বাইরে তাকালোপুনের আকাশে এখন ছেয়ে গেছে ঘন কালো মেঘ।

 

                                                                                                         

দু’দিন আগে-পাশে রাখা অর্নবের ফোনটা নড়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ করল সে।

-      কিরে? কোনোও খবর পেলি সৌমেনের?

-      নারে। ঐস্মিদিও অনেক বার ট্রাই করেছে। কিন্তু কোনো খবর নেই।

অমর্ত্যের এই উত্তরে আবার হতাশ হয়ে পড়ল অর্নব। ছেলেটা দু’দিন কোনো খোঁজখবর দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুনেটা নেহাত কম দুরত্বের রাস্তা নয়। অতদুরে ছেলেটা একা একা গেছে চাকরি করতে। আর হটাৎ কোনো সাড়াশব্দ নেই। চিন্তাটা ক্রমশ রাগে পরিনত হতে থাকল। এভাবে তারা তিনজন কলের পর কল করে যাচ্ছে, অথচ একবার রেসপন্স করবার প্রয়োজনটুকুও নেই।

-      ওর বাবা মা কে কি কল করেছিলি?

-      না, মেসেজ করেছি। রিপ্লাই করেনি এখনো।

-      আচ্ছা। তোর হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস কি ও সিন করেছে?

-      সেটা চেক করিনি। দাঁড়া দেখে জানাচ্ছি।

টিভির সামনে বসে আছে অর্নব। বিশ্বের দরজাতে আজ স্বয়ং যমদুত এসে দাঁড়িয়েছে। করোনা নামক এক ভাইরাস আজ গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে তার থাবা বসিয়েছে। ছোঁয়াচে এই রোগ ভীষন ভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে, একজন থেকে আরেকজনের দেহে। দেশের পর দেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনে চলে যাচ্ছে। ভারতের অবস্থা এই মুহুর্তে অনেকটাই ভালো বাকি দেশগুলোর তুলনায়, কিন্তু এই মৃত্যুদুতের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত আমাদের এই দেশের বিভিন্ন প্রান্তর। খবরের চ্যানেল্গুলো জুড়্রে কেবল একটাই খবর। কতটা গভীর হ’ল  ঐ ক্ষত?

 

 

 

                                                                                                                

তিনমাস আগে- গার্লস্কুলের অপরদিকে যে শুনশান গলিটা বড় রাস্তা থেকে নেমে গেছিল, তার মুখটাতেই দাঁড়িয়েছিল সৌমেন। মুষল্ধারে বৃষ্টি পড়ছে । ছাতাটাও নিয়ে বেরোয়নি বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়। মাথার চুল থেকে পা পর্যন্ত দেহে এক্টুখানি জায়গাও হইত আর ভিজতে বাকি নেই। সামনে দিয়ে কেবল লরিগুলো প্রচন্ড বেগে বেড়িয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে তার বাড়ি আধঘন্টার ওপরে হাঁটা পথ। এখানে দাঁড়িয়েই ভিজবে নাকি হাঁটা শুরু করবে? এসবই আকাশ পাতাল ভাবছে, এমন সময়ই একটা ঝাপসা আলো তার সামনে এসে দাঁড়ালোএকটা স্কুটিভালো করে খেয়াল করতেই দেখল আরে, এতো ঐস্মি। স্কুটি থেকে এক পা মাটিতে নামিয়ে রেখে বলল,

-      সৌমেন, তুই এখানে কি করছিস??

সৌমেনের তখন ও ঘোর কাটেনি। হাঁ করে তাকিয়ে আছে  ঐস্মির মুখের দিকে। কি অপুর্ব লাগছে ওকে আজ। হেলমেটটা খুলতেই একরাশ চুল ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুধের মতো ফর্সা মুখটাতে। ভেজা চুল্গুলো ঐ গোলাপি ঠোঁট কিনারায় এসে যেন লুটিয়ে পড়েছে প্রচন্ড আবেগে। আর এই সব মিলিয়ে ঐ মিষ্টি মুখটা হয়ে উঠেছে আরো মায়াবি।

-      কিরে? কথা বলছিস না কেন?

-      কি? ও, হ্যাঁ। আমি একটু বেরিয়েছিলাম কাজে। এই ভাবছিলাম হাঁটা লাগাবো।

-      পাগল? এতটা পথ, বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাবি? জ্বরে পড়বি। উঠে আয় আমার স্কুটিতে, সামনের একটা বড়ো দোকান আছে। ওখানের ছাউনিতে দাঁড়াব।

সৌমেন আর কথা বাড়ালো না। উঠে পড়ল। কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেল দোকানটাই। প্রায় আধঘন্টা ওখানে দাঁড়িয়েই কেটে গেল। একথা-সেকথার মাঝে কি করে যে সময়টা  চলে গেল, দুজনের কেউই বুঝতে পারলনা। তারপর মেঘ কেটে গেলো। পড়ন্ত বিকেলের আলো গাছের ফাঁক দিয়ে এসে পড়ল ঐস্মির বাঁ গালে। ভেজা চুলে রোদের হামাগুড়ি, আরো মায়াবি লাগছিল মুখটা।

ঐস্মির চোখে দুষ্টু হাসি খেলে গেলো।

-      কি দেখছিস?

সৌমেন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। তারপর ধীরে ধীরে ঐস্মির চোখে চোখ রেখে বলল,

-      কুমোরটুলির প্রতিমা।

হেসে উঠল ঐস্মিসেই হাসির শব্দ ছড়িয়ে গেলো ঠান্ডা বাতাসে ভর করে।  

সৌমেন বলল,

-      এইবার কিন্তু আমি চালাবো।

কি মনে করে, ঐস্মি তার চুলটা খুলে দিল। ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। স্কুটির গতির সাথে চুলটাও উড়তে থাকল আকাশের মেঘের মতো। নদীর ওপর দিয়ে যে বড়ো পাকা ব্রিজটা আছে, সেটার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় সৌমেন অনুভব করল একজোড়া কোমল হাত তার কাঁধে জায়গা নিয়েছে। আকাশে তখন অল্প মেঘ। নদীর ওপরে তখন এপার ওপার জুড়ে আকাশ্চুম্বি আরেকখানা রামধনুর রঙের সাঁকো তৈরি হয়েছে। নিজের অজান্তেই সৌমেন সেদিন আবার প্রেমে পড়ল। 

 

                                                                                                          

বর্তমান সময়- এখন অনেক রাত। জানালার বাইরে গোটা শহরটা এক পরিত্যক্ত নগরীর আকার নিয়েছে। ঘটনাটা প্রায় এক সপ্তাহ আগের। সৌমেন যেই হোটেলের অভ্যর্থক, সেই হোটেলেই সেদিন রাত্রে একটা সরকারি অফিসারের টিম আসে। এমনিতে হোটেলে নতুন কাউকে ঢোকানো নিষিদ্ধ হয়ে গেছিল এই জরুরি অবস্থায়। কিন্তু ওদের রুম দিতে হয়। তাদেরই চেক-ইনের দ্বায়িত্বে ছিল সৌমেন। দু’দিন পরে সকালে যখন সৌমেন ডিউটির জন্য তৈরি হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহুর্তেই ম্যানেজারের কল আসে।

-      সৌমেন, কোথায় তুমি এখন?

-      স্যার, ডিউটিতে যাওয়ার জন্য...

-      প্রয়োজন নেই সৌমেন। তুমি রুমেই থাকো।

-      কেন স্যার? কোনো প্রবলেম?

তারপর যা শুনল তারপর বোধহয় দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিলনা ওর পক্ষে। দুদিন আগে আসা ঐ টিমটার একজনের করোনার সিম্পটম ধরা পড়েছে। তাই ও সমেত আরো সাতজনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে সাতদিনের জন্য। তারপর থেকে এই আজ পর্যন্ত জীবনটাকে ও কোনোদিন ভুলতে পারবেনা। পাশে থাকার মতো কেউ নেই। একাকী দিনযাপন। আর ঘুমহীন রাত্রিবাস। কাউকেই জানায়নি সে। তবুও কিভাবে, অর্নব আর অমর্ত্য বুঝে ফেলেছে কিছু হয়েছে। দু’দিন ধরে মেসেজের পর মেসেজ করে গেছে। সাথে মুহুর্মুহু ফোন কল।

আর ঐস্মি। মেয়েটা কি আমার মনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে থাকে? অত দূর থেকে কি করে জানতে পারে আমার শরীরের ন্যুনতম অবনতি হলেই। এইসব ভাবতে থাকলেও কিন্তু আজ তার ফোন কল ধরার সাহস হারিয়েছে সে। জানে, ঐস্মি তাকে ভুল বুঝছে। ঝড় উঠবে তাদের সম্পর্কের মাঝে। তবু কি করে সে জানাবে যে আসলে সে মৃত্যুর একদম হাতের কাছে বসে। যমদুতের ঘন ঘন নিঃশ্বাস টের পাচ্ছে সে ঘাড়ের ওপর। এই খবর শুনে ঐস্মি যে চিন্তায়, কষ্টে পাগল হয়ে যাবে, তা সৌমেনের থেকে ভালো আর কে জানে।

ঘড়িতে পাঁচটা বাজল। আর দু’ঘন্টা। তারপরেই রিপোর্ট এসে যাবে ঐ ভদ্রলোকের। টিক-টিক-টিক। ঘড়ির কাঁটাটা যেনো চলতেই চাইছেনা। সারারাত না ঘুমিয়ে চোখ জ্বলছে। মাথা ধরে গেছে। উফ! দু’ঘন্টা কাটতে কতক্ষন লাগে?

সারে-সাতটা বেজে গেলো। এখনও ফোনটা বাজল না কেন? তবে কি ওকে জানাতেই ভুলে গেলো?

ফোনটা তুলে ধরতেই যেনো চল্লিশটা হাতুড়ি কেউ সজোরে বুকে মেরে দিয়ে গেলো। পাঁচখানা মিসড কল। ম্যানেজারের। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা খুলতে গেলো, তাড়াহুড়োয় ফোনটা এসে সজোরে পড়ল তার নাকে। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠল। তবু সে সব গ্রাহ্য করল না। তাড়াতাড়ি উঠে বসে কল করল ম্যানেজার কে। উত্তেজনায় আর বসে থাকতে পারলনা। উঠে পায়চারি করা শুরু করল রুমের মধ্যেই। তিন বারের বেলায় কল রিসিভ করল ম্যানেজার।

বেশ কিছুক্ষনের কথোপকথন। ঘরের মধ্যেকার বাতাসটাও যেন কিসের আশঙ্কায় থমকে গেছে। ফাইভ স্টার হোটেলের এই বদ্ধ ঘরের মেঝের কার্পেটের ওপর কান থেকে খসে পড়ল ফোনটা। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মাথার মধ্যে খালি ঘুরছে, রিপোর্টটা পজিটিভ। এর পরে কি তার পালা? জলের বোতলটা কই? দরজাটা খোলা উচিৎ। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসছে কেন? পাটা ভীষন ভারী মনে হচ্ছে। কার্পেটের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো সে। পাশে পড়ে থাকা ফোনটার স্ক্রীনের আলোটা জ্বলে উঠেছে। ক্রমে ভাইব্রেট করে চলেছে। স্ক্রীনে নীল রঙের চতুর্ভুজের মধ্যে বার বার মায়ের নামটা দেখাচ্ছে।

 

                                                                                                        

একটা সুন্দর উপত্যকার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সৌমেন। পায়ের তলায় যেন কেউ সবুজ কার্পেট পেতে দিয়েছে। সবুজ ঘাসগুলোর ডগায় হরেকরঙের ফুল হাওয়ার দোলায় মাথা নাড়াচ্ছে। মাঝখান দিয়ে খয়েরি রঙের পথ নেমে গেছে দূরে।  ওদিকের পাহাড়ের কোল থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অনেক নিচে। আর সেখান থেকে বয়ে গেছে একটা শুভ্র নদী। নদীর ধার বরাবর উঠে গেছে পাহাড়ের পাদদেশ। সেখান থেকে উঠে গেছে পাহাড় মেঘেদের দেশ অব্ধি। ঘন হলুদ মেঘ ঢেকে রেখেছে পাহাড়ের চুড়া। ভোরের প্রথম আলো পড়ে আকাশে নীল, লাল হলুদ হরেক রঙের মেলা বসে গেছে আকাশে। আচমকা খেয়াল হ’ল , দূরে এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে। দেহের আকৃতি অনেকটা চেনা। ঐস্মি? হ্যাঁ হ্যাঁ, ঐস্মি। কিন্তু ও এখানে কি করছে? ওটাকে পাশে? একটা লম্বা চেহারা, ঐস্মির থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। আর সাথে আর একটা পুরুষ চেহারা। কারা এরা?

ততক্ষনে সূর্য বেশ কিছুটা উঠে গেছে। মুখগুলো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ঐস্মির ডান দিকে দাঁড়িয়ে অর্নব আর অমর্ত্য। হটাৎ খেয়াল হ’ল ঐস্মির বাঁদিক থেকে বাবা মা উঠে আসছে। ওরা পাঁচজন আশ্চর্য্য রকম ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো। ওকে যেন দেখতেও পেলনা। ও ডাকল চিৎকার করে।

-      বাবা... ও মা...মা... ঐস্মি... এই অমর্ত্য... অর্নব...

কেউ সাড়া দেওয়া তো দূর, ঘুরেও তাকালো না তার দিকে। যেন তাদের কানে কথায় যাচ্ছে না। অথচ তাদের মুখে গভীর চিন্তার ছাপ। ও তখন রাঙা মাটির রাস্তার ওপর দিয়ে ছুটে চলল তাদের দিকে। হটাৎ খেয়াল হলো, তার চারপাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। প্রচন্ড বাতাস বইছে। মেঘগুলো তার মাথার অল্প একটু উঁচুতে। যেন লাফালেই ছুয়ে ফেলা যাবে। সেই মেঘের মাঝখান দিয়ে বিদ্যুতের রেখা প্রচন্ড শব্দ করে খেলা করছে মেঘ জুড়ে। মেঘটা যেনো তার সাথে সাথেই চলেছে। সে দৌড়লে, ওটাও এগিয়ে চলেছে। ও থেমে গেলে এটাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গজরাচ্ছে। সৌমেনের আর সাহস হ’ল না। ও যাবেনা ওদের কাছে। এই কালো অভিশপ্ত মেঘের ছোয়া ওদের দিতে চায় না। হাওয়ার বেগ বাড়ছে ক্রমশ। হটাৎ একটা আলোর ঝলসানি। প্রচন্ড শব্দ করে বাজটা পড়ল পাশের ছোট্ট গাছটায়। ঝলসে গেলো সেটা। ভয়ার্ত চোখে সে তাকালো সেদিকে। গাছটা ভেঙ্গে পড়ল তার সামনে। কোথা থেকে রাশি রাশি কালো মেঘ ঘিরে ফেলল ওদের সবাইকে। তারপর আলোর আরেকটা ঝলসানি আর কান ফাটানো শব্দ...

সৌমেন ভয়ে আর্তনাদ করে উঠল। চোখ মেলে দেখল নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে। মা মাথার কাছে বসে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। পাশে দুটো চেয়ারে বসে আছে, অর্নব আর অমর্ত্য।

-      জল খাবি?

  সৌমেন মাথা নাড়ল। জলের গ্লাস টা ভরতে ভরতে মা বলে চলল,

-      সমুকে তো ওর হোটেলের ম্যানেজার অচেতন অবস্থায় পেয়েছিল ওর রুমে। সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালে। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখল যে সামান্য জ্বর। কোনোও জটিল অসুখ নই। করোনার রিপোর্ট ও নেগেটিভ এসেছিল। বলল কি, প্রচন্ড ক্লান্তি আর ভয়েই নাকি প্রচন্ড জ্বর এসে গেছিল। ভগবানের অশেষ দয়া, ঘরের ছেলে আমার ঘরে ফিরে এল।

ওরা তিনজনেই লক্ষ্য করল, মায়ের গলাটা শেষ কথা বলার সময়ে  গলাটা ধরে গেছিল। আর চোখের কনায় ঝিলিক দিয়ে উঠেছিল ছোট্ট জলকনা।

-      তোমরা বোসো বাবা, আমি একটু রান্নাঘরের দিকটা দেখে আসি।

ওরা দু’জন ঘাড় নাড়ল। জলের গ্লাসটা টেবিলে চাপা দিয়ে রেখে মা বেড়িয়ে গেলো। আর সাথে সাথেই প্রায় ঝাপিয়েই পড়ল ওরা দু’জনে, সৌমেনের ওপরে। এমন একটা ভয়ংকর খবর ও বেমালুম চেপে গেলো কিভাবে? বন্ধুত্বের মানে কি তবে? অভিমানের বানে সৌমেন কে জর্জরিত করে ওরা দু’জন শান্ত হ’ল। শব্দ হতে পাশে রাখা ফোনটা একবার খুলে দেখল সৌমেন। ঐস্মির মেসেজ।

“কেমন আছিস এখন? ভালো তো? তোর সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছে করছে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ। আবার এক মেঘলা দিনে খোলা চুলে তোর কাঁধে হাত রেখে স্কুটি চেপে উড়ে যাব সেই রামধনু দিয়ে মেঘেদের দেশে। তোর কুমোরটুলির প্রতিমা তোর জন্য অপেক্ষা করছে যে।”

       

Comments

  1. It's really amazing ❤️❤️

    ReplyDelete
  2. ❤❤❤speecspeechless 😇

    ReplyDelete
  3. Ager theke lekar unnoti hoeche onekta, besh vlo,r amr sobcheye vlo legeche bristite osmir description ta, carry on🙂

    ReplyDelete
  4. Khoob Sundar , emon happy ending expect korchhilm , etar sequel chai👍☺️

    ReplyDelete
  5. Eber ektu alada story chai like the intense deeper unexpectable relationship

    ReplyDelete
  6. Wow... Ki darun ree ♥♥♥♥

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Review of Chander Pahar

Review of "Inquisition (ইনকুইজিশন)"

সম্পর্কের ইতিকথা